সারা-বাংলা

মুলাদীর এক মাদ্রাসা সুপারের তেলেসমাতি

স্টাফ রিপোর্টার:

মুলাদী উপজেলার সফিপুর মুন্সীর হাট নূর এ তাজ দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আবদুল হক-এর অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় ধ্বংস হতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী এই দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।

১৯৯৩ সালে দুর্গম এলাকা সফিপুরে নিজের তিন একর পৈত্রিক জমিতে শিক্ষানুরাগী হাজী ফিরোজ আহমেদ মুন্সী মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। তবে ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠাতার জামাতা জানে আলম দুলাল চৌধুরীর প্রচেষ্টায় ও তৎকালীন বরিশাল-৩ আসনের সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন মঙ্গুর সুপারিশে মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্তি লাভ করে

দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

এমপিওভুক্তির কথা বলে সুপার মাওলানা আবদুল হক গোপনে শিক্ষক ও কর্মচারীদের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এমপিওভুক্তির আগে প্রতিষ্ঠাতা হাজী ফিরোজ আহমেদ মুন্সীর আর্থিক সহায়তায় শিক্ষক-কর্মচারীদের সম্মানী দেওয়া হতো। কিন্তু এমপিওভুক্তির পর থেকে তিনি প্রতিষ্ঠাতাকে পাশ কাটিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো মাদ্রাসা পরিচালনা করতে থাকেন।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজ মুন্সী ও তার ভাই বাচ্চু মুন্সীকে সভাপতি বানিয়ে মাদ্রাসাটিকে তারা পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। গত ১৫ বছরে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের মাধ্যমে প্রায় ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।

সর্বশেষ—

  • লাইব্রেরিয়ান পদে মো. মহসিনের নিয়োগে ৫ লাখ
  • আয়া মনিকার নিয়োগে ৪ লাখ
  • কর্মচারী নয়নের নিয়োগে ৪ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া গত ১৫ বছরে প্রতিষ্ঠানের সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারি বরাদ্দ পাওয়া ২৫ লাখ টাকা ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছেন সুপার মাওলানা আবদুল হক ও দুই সভাপতি সিরাজ মুন্সী ও বাচ্চু মুন্সী

নিম্নমানের ভবন নির্মাণ ও হুমকি

সম্প্রতি মাদ্রাসার চারতলা ভবনের নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের একাংশ ও এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলে সিরাজ মুন্সীর ক্যাডার বাহিনী তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয়

এমনকি ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি করে ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন সুপার আবদুল হক ও সিরাজ মুন্সী গং

গোপনে অবৈধ কমিটি গঠন

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সরকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বাতিল করে এডহক কমিটি অনুমোদন করে। পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি হলে সুপার আবদুল হক গোপনে কমিটি গঠনের চেষ্টা করেন

সিরাজ মুন্সীর পরিকল্পনায়

  • কোনো নির্বাচনী তফসিল ছাড়াই
  • নৈশ প্রহরী জাহাঙ্গীর সরদারের ছেলে মো. আরিফ সরদারকে সভাপতি বানিয়ে খসড়া কমিটি গঠন করা হয়।

বিষয়টি জানতে পেরে প্রতিষ্ঠাতা হাজী ফিরোজ আহমেদ মুন্সীর পুত্র ও বর্তমান দাতা মিজানুর রহমান মুন্সী বাধা দিলে তাকে ভয়ভীতি দেখানো হয়

মিজানুর রহমান জানতে চাইলে সুপার মাওলানা আবদুল হক বলেন:
“এসব দাতা-ফাতা কোনো কাজে লাগে না, সিরাজ মুন্সীই সফিপুরের সরকার, তিনি যা বলবেন তাই হবে।”

প্রশাসনে অভিযোগ

বর্তমানে মাদ্রাসার দাতা সদস্য মিজানুর রহমান মুন্সী মুলাদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও জেলা দুর্নীতি দমন কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপার মাওলানা আবদুল হক বলেন:
“আমি দূরের মানুষ, এখানে চাকরি করি। সিরাজ মুন্সী ও বাচ্চু মুন্সী যা বলেছেন, তাই করেছি। সফিপুরে সিরাজ মুন্সীই সরকার। কেউ আমার কিছু করতে পারবে না।”

তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন,
“আমরা সফিপুর মুন্সীর হাট নূর এ তাজ দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আবদুল হকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *