বাকেরগঞ্জে চাঁদার টাকা না পেয়ে তরমুজ চাষীকে পিটিয়ে হত্যা
নিজস্ব প্রতিবেদক
বরিশালের বাকেরগঞ্জে চাঁদার টাকা না পেয়ে কুদ্দুস হাওলাদার (৪৫) নামের এক তরমুজ চাষীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার চরাদি ইউনিয়নের পূর্ব চরাদীতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত কুদ্দুস হাওলাদার পূর্ব চরাদী এলাকার আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদারের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে কুদ্দুস হাওলাদার তার বাড়ির পাশে নিজের তরমুজ ক্ষেতে কাজ করছিলেন। এ সময় স্থানীয় বখাটে আনোয়ার, সানি, ফয়সাল, হিরন, মিরাজ, সরোয়ারের নেতৃত্বে ১০-১৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল দুই লাখ টাকা চাঁদার জন্য তরমুজ ক্ষেতে আসে।
চাঁদার টাকা না পেয়ে বখাটেরা তার তরমুজ লুট করে নিয়ে যেতে শুরু করলে কুদ্দুস বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা কুদ্দুসের উপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং ক্ষেতের পাশে থাকা রেইনট্রি গাছের লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে গুরুতর আহত করে।
আহত কুদ্দুসকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে চরামদ্দি ফাঁড়িতে নিয়ে যান। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (৪ এপ্রিল) ভোররাত তিনটার দিকে কুদ্দুস হাওলাদার মারা যান।
নিহতের মামাতো ভাই, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মো. মজিবুর রহমান জানান, কুদ্দুস বাড়ির পাশে জমি বর্গা নিয়ে তরমুজ চাষ করেছিলেন। কিছুদিন ধরে স্থানীয় বখাটেরা চাঁদার জন্য চাপ সৃষ্টি করছিল। চাঁদা না পেয়ে তারা তরমুজ লুটে নেয় এবং প্রতিবাদ করায় তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
নিহতের মেয়ে সাদিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, “কিছুদিন ধরে বাবার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছিল বখাটেরা। টাকা না দেয়ায় মাঠ থেকে তরমুজ নিয়ে যায়। বাবা বাধা দিলে তারা বাবাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। আমাদের ছোট দুটি ভাইবোন রয়েছে, এখন আমরা এতিম হয়ে গেলাম। আমরা বাবার হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
এদিকে শুক্রবার বিকেলে কুদ্দুসের লাশ নিয়ে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী আসামিদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে।
চরামদ্দি ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই এনামুল হক শহীদ জানান, জমি বর্গা নিয়ে তরমুজ চাষ করেছিলেন কুদ্দুস হাওলাদার। কিছুদিন ধরে পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন রাতের আঁধারে ও দিনে তার ক্ষেত থেকে তরমুজ চুরি করছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁদার জন্য ক্ষেতে এসে চাষী কুদ্দুসকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে ফেলে রেখে যায়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়, যেখানে তার মৃত্যু হয়।
বাকেরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, নিহতের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।