সারা-বাংলা

পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে দেখেন খাটিয়ায় বাবার নিথর দেহ, বাউফলে হৃদয়বিদারক ঘটনা

মেয়ের এসএসসি পরীক্ষার দিনই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বাবা। পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে বাবার লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে মেয়ে।

বাউফল প্রতিনিধি
প্রকাশের তারিখ: ১০ এপ্রিল ২০২৫

বিস্তারিত সংবাদ:
মেয়ের প্রথম এসএসসি পরীক্ষা। তাই মা-বাবা দুজন মিলে সকালে মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছিলেন পরীক্ষা কেন্দ্রে। হঠাৎ পথেই বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন বাবা। মেয়েকে একা পাঠিয়ে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু এ খবর জানতেন না মেয়ে। পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে দেখেন বাবার নিথর দেহ খাটিয়ায় পড়ে আছে। হৃদয়বিদারক এই ঘটনা ঘটেছে বৃহস্পতিবার সকালে, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ভরিপাশা গ্রামে।

ভরিপাশা গ্রামের বাসিন্দা ও কালিশুরী এস.এ ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমান। তারই বিদ্যালয় থেকে এবছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন তার মেয়ে তাসফিয়া আক্তার। বৃহস্পতিবার ছিল প্রথম পরীক্ষার দিন। পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার পথে মাহবুবুর রহমানের হঠাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সকাল থেকেই মাহবুবুর রহমান বুকে ব্যথা অনুভব করছিলেন। তারপরেও মেয়েকে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দিতে বের হন। পরিকল্পনা ছিল, মেয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিলে তিনি ডাক্তারের কাছে যাবেন। কিন্তু ভাগ্য আর সে সুযোগ দেয়নি। সকাল ৯টার দিকে গাজিমাঝি এলাকায় পৌঁছানোর পর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্থানীয়রা দ্রুত তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান, যেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তাসফিয়া তখন একাই পৌঁছান পরীক্ষাকেন্দ্রে। কিন্তু পরীক্ষায় মন বসছিল না তার। বারবার কেন্দ্রে দায়িত্বরত শিক্ষকদের জিজ্ঞেস করছিলেন, “বাবা কেমন আছেন?” শিক্ষকরা শান্তনা দিয়ে বলছিলেন, “তোমার বাবা সুস্থ আছেন, তুমি পরীক্ষা দাও।” কিন্তু পরীক্ষা শেষে যখন তিনি বাড়ি ফিরলেন, তখন চোখে পড়লো খাটিয়ায় বাবার নিথর দেহ। বাড়ি জুড়ে কান্নার রোল, শোকের মাতম।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাসফিয়া বলেন, “সকালে বাবার সঙ্গে একসাথে ভাত খেয়েছি। তার বুকে তখন থেকেই ব্যথা করছিল। আমি আর আম্মু বারবার বলছিলাম, ডাক্তারের কাছে যাও। আব্বু বলছিল, ‘তোমাকে পরীক্ষার হলে দিয়ে তারপর ডাক্তারের কাছে যাবো।’ এরপর রাস্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি তখন পরীক্ষাকেন্দ্রে যাই। পরে আব্বুকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। স্যারেরা বলছিলেন, আব্বু সুস্থ আছেন। বাড়ি এসে দেখি…” — এরপর আর কিছু বলতে পারেননি তিনি, কান্নায় ভেঙে পড়েন।

কালিশুরী এস.এ ইনস্টিটিউটের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. ইউসুফ বলেন, “তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। বিদ্যালয়ের উন্নয়নে তার অবদান ছিল অগ্রগণ্য। তার এমন অকাল মৃত্যু প্রতিষ্ঠানটির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *